মিঠাপুকুরে প্রভাষকের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ
মিঠাপুকুর প্রতিনিধি:রংপুরের মিঠাপুকুরে কলেজ প্রভাষকের বিরুদ্ধে একের- পর- এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে এক নারীর বিরুদ্ধে। আর তাকে সহযোগিতা করছেন মামলাবাজ একটি প্রতারক চক্র। চার বছরে ওই নারী তার প্রতিবেশী সহ প্রভাষকের বিরুদ্ধে বৈরাতীহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং মিঠাপুকুর থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এমনকি বিয়ের প্রলোভণে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে, ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক চক্রটি। এবার নিজের পেটের ভ্রুণ নিজে নষ্ট করে আদালতে ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন ওই নারী। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ক্ষোঁভের সৃষ্টি হয়েছে। মামলাবাজ নুরনাহারের কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১৬ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব মুরাদপুর ডারারপাড় গ্রামের শাহজালালের স্ত্রী নুরনাহার বেগমের (৪০) সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে রুহুল আমিনের । এরই জের ধরে, রুহুল আমিনের ছেলে কলেজ প্রভাষক, সুজন মিয়াকে ফাঁসাতে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ তোলেন নুরনাহার। প্রভাষক সুজনকে ফাঁসাতে কখনো বিয়ের প্রলোভণে ধর্ষণ,জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণে বাঁধা দেওয়ায় বাড়িঘর ভাংচুর সহ নানাবিধ অভিযোগ রটান। আর একাজে তাঁকে সহযোগীতা করেন এলাকার চিহ্নিত মামলাবাজ লেবু মিয়া ।
নুরনাহারের মিথ্যা মামলায় শুধু স্থানীয়রা নন,অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তার ভাসুর নুহকামাল, জা-সেতারা বেগম এবং ভাতিজী নুসরাত। নুহকামাল বলেন,আমার ভাই শাহজামাল বাড়িতে থাকেনা। হাবাগোবা প্রকৃতির হওয়ায় যে যাই বলে তা শোনে। সহজসরল প্রকৃতির হওয়ায় কয়েকজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দিয়ে মামলা বানিজ্য করছে। সুজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। নুহকামালের স্ত্রী সেতারা বেগম বলেন, শুনছি আদালতে সুজনের বিরুদ্ধে সন্তান নষ্ট করার মামলা করেছে। তিনি বলেন, সম্ভবত নুরনাহার ঔষধ খেয়ে বাচ্চা নষ্ট করে এবারো মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে। ভাতিজী নুসরাত বলেন, আমার চাচী মানুষের বুদ্ধি শুনে এসব করে।
রুহুল আমিন বলেন, পূর্বে ওই নারী আমার ছেলের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভণে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেন। মানসম্মান বাঁচাতে আমি গ্রাম্য সালিসে অর্থের বিনিময়ে মিমাংসা করি। আমার ছেলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও মসজিদ কমিটির লোকজনের উপস্থিতিতে ঔ প্রতারক চক্রটিকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। এরপর গত-২৫ জানুয়ারি, আমার ছেলের বিরুদ্ধে নুরনাহার জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ চেষ্টার একটি অভিযোগ রটান। বিষয়টি আমরা আমলে নেইনি। পরে জানতে পারি নুরনাহার, গত (২০ এপ্রিল) আমার ছেলে সুজন সহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে তিনি উল্লেখ্য করেন,আমার ছেলে নাকি তিনমাস পূর্বে তার তলপেটে লাথি মেরে দেড় মাসের ভ্রুণ হত্যা করেছে। মামলাটি পিবিআই,তদন্ত করছে। তিনি বলেন, নুরনাহার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমি মুর্খ মানুষ বাবা ওরা আমার ছেলের চাকরি খাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। একবার হুমকি দিয়ে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে, আবার ছয় লাখ টাকা না দিলে আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রভাষক সুজন বলেন,আমার বাবাকে হুমকি এবং মান-সম্মানের ভয় দেখিয়ে এর আগে টাকা হাতিয়ে নেয়। আবারো সেই ফন্দি আঁটছে। আমি চাই এবার সঠিক তদন্ত। অন্যায়ের সাথে এবার কোনো আপোষ নয়।
অভিযুক্ত নুরনাহার বেগম বলেন, গ্রামের মাতব্বরেরা বিচারের নামে টাকা নিয়েছে। আমি কোনো টাকা নেইনি।আমার সন্তান নষ্ট করেছে। আমি ন্যায় বিচার চাই।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,ডাঃ মোঃ রাশেবুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে নুরনাহার বেগম নামে ওই নারী গত-২২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে আসেন। পরে চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ছাড়পত্রে ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকলেও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স জানান, হাসপাতাল ভর্তির একদিন পরেই ওই রোগী হাসপাতাল ত্যাগ করেছিলেন। দালাল চক্র নিয়ে হাসপাতাল ঘুরছিলেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা,ফিরোজ কবির বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। বাদীকে মেডিকেল রিপোর্ট সহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে বলেছি। এখনো তেমন কিছু দিতে পারেননি। সব হাতে পেলে বোঝা যাবে ঘটনা কি ঘটেছে। আপাতত এর বাইরে মন্তব্য করার সূযোগ নেই।