তারাগঞ্জে সাংবাদিক হেনস্তা, নীরব ভূমিকায় পশু সম্পদ কর্মকর্তা!
“মামুনুর রশীদ তার পূর্ববর্তী কর্মস্থল গঙ্গাচড়া উপজেলায় কর্মরত থাকাকালে অশোভন আচরণ ও দুর্ব্যবহারের কারণে স্থানীয় জনগণের হাতে গণপিটুনির শিকার হন।”
বিশেষ প্রতিনিধি : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় তিনজন জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকের সাথে এক সরকারি কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক আচরণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংবাদিক মহলের উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার ১০দিন অতিবাহিত হলেও অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ১৮ জুন (বুধবার) দুপুরে দৈনিক আমার দেশ, কালবেলা ও সকালের সময় পত্রিকার তারাগঞ্জ প্রতিনিধিরা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গেলে কর্মরত উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) মো. মামুনুর রশীদ তাদের সঙ্গে রূঢ় ও কটূক্তিপূর্ণ আচরণ করেন। তিনি সাংবাদিকদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেন এবং অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না বলে জানান।
এ ঘটনা জানাজানির পর তারাগঞ্জের সকল সংবাদকর্মীরা দ্রুত প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে উপস্থিত হন এবং তীব্র প্রতিবাদ জানান। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে বিষয়টি উপজেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা ঘটনাস্থলে তাৎক্ষনিক উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সরকারি তথ্য সংগ্রহ সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকার। একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন আচরণ কাম্য নয়। এ সময় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অফিসে ছিলেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে অফিসে ফোনে ডেকে নেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কে এম ইফতেখারুল ইসলাম অফিসে এসে এটিকে অনভিপ্রেত ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।
তারাগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবিলম্বে অন্যত্র বদলির দাবি জানান। সাংবাদিকরা ১ সপ্তাহের মধ্যে তাকে বদলীর দাবী জানালে পশু সম্পদ কর্মকর্তা ইফতেখারুল ইসলাম জেলা আফিসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করেন।
এদিকে, ঘটনার ১০ দিন হয়ে গেলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইফতেখারুল ইসলাম রহস্যজনক কারনে মামুনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।
প্রসঙ্গত, তারাগঞ্জ পশু হাসপাতালের যোগ দেওয়ার পর দুর্নীতিবাজ মামুন পশু সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভিতরে ফলজ ও বনজ সরকারি গাছ কর্তন করে বিক্রি, উপকারভোগী পিজি গ্রুপের সদস্যদের সভা ও প্রশিক্ষণের খাবার ও ভাতার টাকা আত্মসাৎ, নিজেদের পছন্দের লোকদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ
সরকারি বরাদ্দ নেই বলে জানিয়ে সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে লিপ্ত রয়েছেন।
এছাড়াও, উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) মো. মামুনুর রশীদ এর আগে গঙ্গাচড়া উপজেলায় কর্মরত থাকাকালে আচরণ খারাপের জন্য স্থানীয়দের হাতে তিনি গণপিটুনি খেয়েছিলেন।
তারাগঞ্জের সাংবাদিক সমাজের অভিযোগ, অভিযুক্ত কর্মকর্তার একের পর এক অপেশাদার আচরণ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা বলছেন, এটি শুধু সাংবাদিক নয়, গোটা গণমাধ্যম পেশার প্রতি চরম অবমাননার শামিল।
তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অবিলম্বে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) মো. মামুনুর রশীদ বদলীসহ বিভাগীয় শাস্তির দাবী করেছেন।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু সায়েদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি শুনেছি। এখন ব্যস্ত আছি বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।