জাসদের সকল অংশের ঐক্য করে আমরা এই নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবো এবং ক্ষমতায় গেলে জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মী হত্যার বিচার করবো- ব্যারিস্টার ফারাহ খান
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ‘জাসদ’ এক খন্ড বিখন্ড ভাগ গুলোকে এক করতে গত কয়েক মাস ধরে খুব জোরালো ভাবে কাজ করছেন ব্যারিস্টার ফারাহ খান। তিনি সমগ্র বাংলাদেশের সক্রিয় নিস্ক্রিয় সকল জাসদ নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন এবং ৮টি বিভাগে জাসদের ঐক্য করার জন্য জাসদের সকল অংশের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মত বিনিময় সভা করছেন। তারই ফলস্বরুপ, তিনি আজ বৃহস্পতিবার ২৬ জুন রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার ম্যাক্স মোটেলে জাসদের সকল অংশের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মত বিনিময় সভা করেন। ব্যারিস্টার ফারাহ খান স্বাধীনতার রুপকার নিউক্লিয়াস প্রধান জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান দাদার ভাতিজি।
খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের পর এবার রাজশাহী বিভাগে মতবিনিময় সভায় ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেন- ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, দেশ স্বাধীনের পর সে স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হয়নি। গণতন্ত্র হত্যা, বাক স্বাধীনতা হরন ও সারাদেশে লুটপাট চরম আকার ধারন করে। মুক্তিযোদ্ধারা এমন স্বাধীনতা চায়নি বলেই আমাদের নেতা সিরাজুল আলম খান দাদার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ গঠিত হয়। জাসদ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল, প্রথম বিরোধী দল এবং শতভাগ মুক্তিযোদ্ধার দল। যেই দলের সৃষ্টির অন্যতম কারন ছিল গনতন্ত্র রক্ষা করা কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো আমাদের জন্মের এই ৫৩ বছরে আমরা আমাদের কোন সভাপতি কিংবা সাধারন সম্পাদক কে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারিনি। আমাদের সব সভাপতি সাধারন সম্পাদক সিলেকশনের মাধ্যমে পদে বসেছেন। তাই তারা দিন দিন কর্মীদের থেকে দূরে সরে গেছেন এবং দলে বিভক্তি বেড়েছে। কিন্তু এবার আমরা কর্মীরা মিলে জাসদের ইতিহাস গড়বো। এবার আমরা কর্মীরা নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের সভাপতি সাধারন সম্পাদক সহ পুরো কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করবো। এভাবে আমরা জাসদকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করবো এবং ভবিষ্যতের ভাঙন রোধ করবো।
তিনি বলেন- বড় দলের নেতারা আমাদের একটি দুটি আসন দেয় আর আমরা সেই আসন নিয়ে খুশি হয়ে যাই। কিন্তু জাসদই হতে পারতো এই দেশের রাজনীতির মূল শক্তি। আমরা দেখি আমরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সাথে জোট বেঁধে রাজনীতি করে এলাকায় যেতে পারিনা কিন্তু আমরা অন্য দলের জন্য কেন শাস্তি ভোগ করবো। জাসদ ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। একটি বা দুটি আসনের জন্য বড় বড় দলের উপর আমরা আর নির্ভর করতে চাইনা। আমরা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সকল অংশকে এক করে এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনে নিজেরা প্রার্থী দেবো এবং আমরা ক্ষমতায় গেলে জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মী হত্যার বিচার আমরা এই বাংলার মাটিতে করবো।
তিনি আরো বলেন- ১৯৭২ সালে জাসদ একটি বটগাছ ছিল কিন্তু সেই জাসদ ব্যক্তি স্বার্থে খন্ড বিখন্ড হয়ে গত ৫৩ বছরে পরগাছা হয়ে গেছে। সেই কারণে আমি আজ আপনাদের কাছে এসেছি কারণ জাসদ কোন নেতার দল নয়, জাসদ কর্মীদের দল। জাসদের কর্মীরাই এ দলের প্রান ও শক্তি। তাই জাসদকে আবারো কর্মিদের কাছে ফিরিয়ে নিতে হবে। আমরা কোন অংশের কোন নেতা কে বাদ দিচ্ছিনা কিন্তু আপাতত আমরা নেতাদের ঐক্য করবো না। আমরা কর্মীদের ঐক্য করবো আগে কারণ আমরা নেতাদের ঐক্য হতে দেখেছি ১৯৯৭ সালে, আবার সেই ঐক্য আমরা ভাঙতেও দেখেছি বছর ঘুরতে না ঘুরতে যখন নেতাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। আবারো দল ভেঙেছে ২০১৬ সালে পদের কারণে। তাই এবার কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে আগে তারপর আমরা নেতাদের কাছে যাবো। আমাদের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সরকার আমাদের উপর বিভিন্ন সময় অন্যায় অবিচার করলেও, আমরা কখনো আওয়ামীলীগ কখনো বিএনপি আবার কখনো এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করেছি। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছি। আসেন আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াই। নিজেদের শরীর থেকে ফ্যাসিস্টের দোসর, রাজাকারের সহচর, হালুয়া-রুটির ভাগিদার এই নাম গুলো মুছে ফেলি। তিনি প্রশ্ন করেন- আমরা আওয়ামীলীগ/বিএনপির সাথে জোট করতে পারি কিন্তু আমরা এক জাসদ অন্য জাসদের সাথে এক হতে পারিনা কেন? কাদের স্বার্থে কিসের স্বার্থে এই বিরোধিতা? আসেন আমরা অতীতের সব বাদ দিয়ে ও মান অভিমান ভুলে জাসদের সকল অংশের নিজেদের ভাইদের হাত ধরি এবং এক সাথে একটি জাসদ হয়ে সম্মানের সাথে চলি। জাসদের ১৮ দফা ও সিরাজুল আলম খান দাদার ১৪ দফার ভিত্তিতে আমরা জাসদকে নতুন করে দাঁড় করাবো এবং সম্মানের সাথে বাঁচবো।
তিনি বলেন আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আমাদের জাসদের কোন অংশ বা নেতারা নতুন প্রজন্ম তৈরী করেননি। আপনাদের শ্রদ্ধেয় সিরাজুল আলম খান দাদা এবং আমার প্রাণের মেজকাকা সেটি উপলব্ধি করে নিজে উদ্দোগী হয়ে আমাকে তার জীবদ্দশায় জাসদের রাজনীতিতে প্রবেশ করিয়েছেন। জাসদের ঐক্য নিয়ে তাঁর সাথে আমার বিস্তর কথা হতো, আমি উনাকে কথা দিয়েছি আমি জাসদের ঐক্য করবো যত বাঁধা আসুক না কেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেন আমাকে বাঁধা দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে জাসদেরই ভেতর থেকে। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আমার পরে এই প্রজন্মের আর কেউ নেই যে আপনাদের কাছে এমন করে জেলায় জেলায় বিভাগে বিভাগে আসবে এবং জাসদ ঐক্যের জন্য লড়াই করবে। আমাদেরই দুটি জাসদের কেন্দ্রের নেতারা আপনাদেরকে ফোন করে মতবিনিময় সভাগুলো তে আসতে বারন করে এবং বহিষ্কারের ভয় দেখায়। এগুলো আসলে বাজে কথা কারন আপনাদের এখানে আসার আগে আমি ইতিমধ্যে চারটি বিভাগে ঐক্য জাসদের পক্ষে সকলের অংশগ্রহণে বিশাল মতবিনিময়ে সভা করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন জাসদের কেউ কোন বিভাগের কোন নেতা-কর্মীকে বহিস্কার করেনি। তাই আপনারা বিশ্বাস করেন আপনারা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ জাসদ চান তবে কেন্দ্র কিছু করতে পারবে না কারণ কর্মীরা যদি দল মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে দল চলতে পারবেনা। মনে রাখবেন যারা জাসদের রাজনীতি মনে প্রাণে ধারন করে তারা শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত জাসদের ঐক্য চাইবে আর যারা জাসদের ঐক্য চায় না তারা আর যাই হোক অন্তত জাসদ করে না, তারা দালাল জাসদ।
তিনি আরো বলেন- আমরা জাসদ যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি তবে আমাদের অস্তিত্ব তো বিলীন হবেই পাশাপাশি এই দেশ পরবে এক মহা বিপদে কারন নিউক্লিয়াস সহ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রচার করার আর কোন দল থাকবে না। জাসদের রাজনীতি কতটা প্রসংগিত তা ৫ আগষ্টের পর প্রমানিত হয়েছি কারন আমাদের নেতা সিরাজুল আলম খান দাদার প্রস্তাবিত ১৪ দফার ভিত্তিতেই এখন প্রায় সকল সংস্কার গুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি এই ১৪ দফা আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী না হওয়ার কারণে আমাদের কোন মুখপাত্র নেই এবং আমরা আমাদের রাজনীতি প্রচার করতে ব্যর্থ হচ্ছি।
এই সভায় সভাপত্বি করেন বর্ষিয়ান নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম রাঙা। তিনি সভাপতি পাবনা জেলা (বাংলাদেশ জাসদ, আম্বিয়া)। সভা পরিচালনা করেন অধ্যপাক গোলাম মোস্তফা ঠান্ডু। সভায় প্রধান অথিতি ব্যারিস্টার ফারাহ খানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক সরকার (কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি, জাসদ ইনু), বগুড়ার কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল বারি দিপন (জেএসডি রব), রাজশাহীর বর্ষিয়ান নেতা শফি চেয়ারম্যান (জাসদ ইনু), তুহিন চৌধুরী (সভাপতি, বগুড়া জেলা, বাংলাদেশ জাসদ আম্বিয়া), ডি এম আলম (কেন্দ্রীয় সদস্য ও সহ সভাপতি নাটোর জেলা, জাসদ ইনু), বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার আব্দুল আলিম (সাবেক জাসদ নেতা), বগুড়ার নেতা সাব্বির পল্লব (সাবেক জাসদ নেতা), নাটোরের জাসদ নেতা হালিম মন্ডল (জাসদ ইনু), রংপুর বিভাগ থেকে আগত সাব্বির আহমেদ, প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন- বগুড়া সদরের সভাপতি চেয়ারম্যান হারুন (জাসদ ইনু), অধ্যাপক গোলাম রোব্বানি (সাবেক জাসদ নেতা), আতিকুজ্জামান তুহিন (জাসদ ইনু), ইসমাইল হোসেন দুখু (বাংলাদেশ জাসদ, আম্বিয়া), নাহিদ, সাইফুল বিন হানিফ এবং রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলার জাসদের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মিরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সকল নেতাকর্মিরাই দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ জাসদ গড়ে তোলার পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করেন প্রয়োজন হলে তারা রাদনীতি বাদ দেবেন এবং খন্ড বিখন্ড জাসদের দলগুলো থেকে একসাথে বেরিয়ে আসবেন কিন্তু কেউ আর খন্ড বিখন্ড জাসদ করবেন না। অবশেষে ব্যারিস্টার ফারাহ খানের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে সকলে স্লোগান ধরেন ‘আমাদের লক্ষ্য জাসদের ঐক্য।’