মা,ও মা ডেকেছেন সারারাত, সকালে বাড়ির পিছনে মিলল যুবকের লাশ
সৌভিক পোদ্দার, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। ‘মা মা’ বলে সারারাত ডাকাডাকির পর সোমবার সকালে জালালপুর পূর্বপাড়ার একটি বাড়ির পাশের সড়ক থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের (বয়স আনুমানিক ৩০) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
যুবকের কোন স্বজনের সন্ধান না পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে জালালপুর কবরস্থানে দাফন করেছেন।
কোটচাঁদপুরে জালালপুর গ্রামে ভিবিডি ইউনিয়নের দলপতি আশিকুর রহমান বলেন, ২০ মে তারিখে ওই মানুষটির সঙ্গে আমার দেখা হয় জালালপুর জোড়া ব্রিজের সামনে। ওই দিন আমি নাম-পরিচয় নিতে বেশ চেষ্টা করি। তবে কোনো উত্তর মেলেনি। শুধু খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে মাথা নাড়াত। আর কিছু দিলে সেটা খেত।’ তিনি বলেন, মানুষটির বয়স হবে ২৮-৩০ বছর হবে। তবে গায়ে হাড় ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তিনি খুবই অসুস্থ ছিলেন। আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, ওই ব্যক্তিটি তালিনা গ্রামে ছিল। ওরা রাতের অন্ধকারে তাঁকে এখানে ফেলে রেখে গেছে। সেই থেকে ঘুরছিল রাস্তায় রাস্তায়, রোদ-বৃষ্টির মধ্যে। আজ সকালে জানতে পারি, সে মারা গেছে। খবর পেয়ে গিয়ে কিছু ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছি। এ ছাড়া খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তালসার পুলিশ ফাঁড়ির দারোগা তবিবুর রহমানও এসেছিলেন।’
জানা গেছে, যুবকের কোনো স্বজনের সন্ধান না পেয়ে তাঁকে জালালপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাবেক দুজন ইউপি সদস্যসহ গ্রামের অনেকে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
কোটচাঁদপুরের তালসার পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) তবিবুর রহমান বলেন, ‘মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জানতে পারলাম লোকটি ২০-৩০ দিন ধরে ওই এলাকায় সড়কে পড়ে থাকতেন। তাঁর শরীরে হাড় ছাড়া কিছু ছিল না। খুবই অসুস্থ ছিলেন বলে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি। এরপরও তিনি কারোর বাড়িতে থাকতেন না। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে তিনি ওই এলাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কে শুয়ে থাকতেন। আর হাঁটতে পারতেন না।
হামাগুড়ি দিয়ে চলতেন রাস্তায়।’ তিনি বলেন, রোববার রাতে নজরুল ইসলামের বাড়ির পেছনে গিয়ে শুয়ে ছিলেন ওই যুবক। সারা রাত মা মা করে ডেকেছেন বলে এলাকার মানুষ জানিয়েছেন। এরপর সকালে সবাই এসে দেখতে পান তিনি মারা গেছেন। গ্রামবাসী স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।’
উল্লেখ, এর আগে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে শুয়ে ৪৮ দিন চিকিৎসা নিয়ে মারা যান ৬০ বছর বয়সি এক নারী। পরে তাঁকে ঝিনাইদহের আঞ্জুমান মফিদুলে মরদেহটি হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।