“দল বিশেষের পৃষ্ঠপোষকতা করলে প্রধান উপদেষ্টার মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়” -শরীফ নুরুল আম্বিয়া
‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশ জাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাসদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি জনাব আব্দুস সালাম খোকন। ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নেতা জনাব আশফাকুর রহমান সবুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ সরবজনাব ডাঃ মুশতাক হোসেন, আব্দুল কাদের হাওলাদার, এ টি এম মহব্বত আলী; স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করিম সিকদার, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমেদ, স্থায়ী কমিটির পর্যবেক্ষক সদস্য রোকনুজ্জামান রোকন, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এফএম ইসমাইল চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল প্রমুখ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে জনাব শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, “দেশ আজ কঠিন সমস্যায় উপনীত। জুলাই-আগষ্ট ‘২৪ এর ছাত্র গণঅভ্যুথান উত্তর রাজনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা গভীর হচ্ছে। ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির দ্বারা পতাকা ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের অপচেষ্টার মধ্য দিয়ে, যা ব্যর্থ হয়েছে। এখনো মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগ্রামী জনগনের আত্মত্যাগ, অবদান ও গৌরব খাটো করার অপচেষ্টা চলছে।
“অদৃশ্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্তদের বিভক্ত করার মহড়া চলছে। নতুন দল এনসিপি নিজেরাই বুঝে-না-বুঝে এই কাজ করছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ও তার চাটুকার নেতা মন্ত্রীদের বিচার, ঐক্যমতের সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন করাই আমাদের লক্ষ্য। সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় আমাদের সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু সরকার এ কাজের চেয়ে এনসিপির পক্ষে পরিবেশ তৈরি করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে কাজ করছে। ইউনুস সাহেবও এসব প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে আমাদের মনে হয়। একটি নির্বাচনকালিন সরকারের জন্য এমন কাজ মানানসই না। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চায় কিনা তার নিশ্চয়তা নাই, আওয়ামী লীগ এর বিচার হবে, বিচার প্রক্রিয়ায় তা নিস্পত্তি হতে পারত। বিচারের আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ইস্যু তৈরী করে অভ্যুথানের শক্তিকে বিভক্ত করা হয়েছে। এনসিপির নেতারা এটা করেছে। এতে ইউনুস সাহেব প্রশ্রয় নাই তা বিশ্বাস করা কঠিন।
”আমরা গণঅভ্যুথানে সম্পৃক্ত সকল শক্তির সমন্বয় ও ঐক্যের ভিত্তিতে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন করতে চাই। এই কাজে তাঁর প্রতি জনগন আস্থা রেখেছিল। আস্থা এখনো শেষ হয় নাই। তাঁর দায়িত্ব, নিরপেক্ষ ভাবে সেই আস্থার প্রতিদান দেয়া। এনসিপি যারা গঠন করেছে তাদের অবিলম্বে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়া উচিত এবং তাদের সংগে অন্যদলের মত সমদুরত্ব রক্ষা করা উচিত। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিতে যে বিভক্তি এসেছে তা দূর করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী সহ গণঅভ্যুথানের সকল অংশীজনের সংগে সমন্বয় অপরিহার্য। এটা ছাড়া অস্থিরতা কাটবে না, গণঅভ্যুথানে সৃষ্ট স্বপ্ন নস্যাত হবে।
”স্পর্শকাতর ইস্যু সমুহ, যেমন করিডোর ও বন্দরব্যবস্থাপনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। প্রাসংগিক ভাবে বলতে হয়, ভারতের সংগে আমাদের সমস্যা হয়েছে বলে আমেরিকা/চীন আমাদের ঝুঁকিমুক্ত করে দেবে না। তারা তাদের স্বার্থে আমাদের ঝুকিতে ফেলতে দ্বিধা করবে না। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেই গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন উন্নয়নের পথে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।”
সাধারণ সম্পাদক জনাব নাজমুল হক প্রধান বলেন, “সরকারের মধ্যে নিয়মিত সরকারের আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখান থেকে সরকারের বেরিয়ে আসা উচিৎ। আমাদের প্রত্যাশা সরকার দ্রুত সংস্কারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। ”
তিনি বলেন, ”মানবিক করিডোরের নামে কোন করিডোর দেওয়া কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর কোন বিদেশী কোম্পানির কাছে লিজ দেওয়া এই সরকারের কাজ নয়। গণতন্ত্রের পথে দেশকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিন।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ”আন্দোলনের সকল অংশীজনদের সাথে বসে সংকট থেকে উত্তরণের উদ্যোগ নিন। দেশের ঐক্য বিনষ্ট করবেন না। দ্রুত নির্বাচন দিন।”