বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একাত্তরের আপাত বিজয়ের আরেকটি অভিঘাত ছিল সময়ের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের ভেতরের শক্তিরই অসমাপ্ত বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার অথরিটি তৈরি হয়। লড়াইয়ের মূলধারার বাইরের কোনো শক্তির পক্ষে কি সেই দাবি পূরণ করা সম্ভব? ইতিহাস তা বলে না। সেটা কি সেই সময়ের কোনো দল বা নেতা বুঝতে পেরেছিলেন? আমাদের চোখে পড়েনি। সশস্ত্র যুদ্ধের ভেতরের আপসহীন শক্তি ছাড়া সেই দাবি কে পূরণ করতে পারে? সেই দাবি পূরণে নেতৃত্বের ন্যায্যতা কার হতে পারে? সেই দাবি পূরণে জাসদ ছাড়া আর কোনো শক্তি কি সমাজে উপস্থিত ছিল? থাকলে তারা এতবড় শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে পারলেন না কেন? সময়ের সমান্তরালে জাসদের কি প্রস্তুতি ছিল? মুক্তিযুদ্ধে অসমাপ্ত থাকা সেই সমাজ বিপ্লবের কঠিন কর্তব্য সমাধানের জন্য নিউক্লিয়াস থেকে সেই প্রস্তুতি কতটুকু ছিল, তা কি যথেষ্ট ছিল? আওয়ামী লীগ ও স্বাধিকারপন্থি ছাত্রলীগের সঙ্গে নিউক্লিয়াসপন্থিদের আচরণে, স্বভাবে ও ¯স্লোগানে পার্থক্য ছিল, ভ্রূণ আকারে হলেও রাজনৈতিকভাবে প্রামাণ্য (Documented) স্বতন্ত্র অবস্থান ছিল কি? এখানে শুধু প্রশ্নই রাখা হলো, উত্তর খুঁজবেন এ বিষয়ে আগ্রহীরা।
বাস্তবতা হলো, সেই সময়ে অসমাপ্ত বিপ্লবের দায় পড়েছিল জাসদের কাঁধেই। ষাটের দশকে জেগে ওঠা তারুণ্যের মূলধারা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছিল জাসদের খাতে। জাসদ হয়ে উঠেছিল সাহসীদের সংগঠন। এই কালপর্বে অমিত তেজ আর স্পর্ধিত সাহস নিয়ে ঝলছে উঠেছিল জাসদ । তাদের সাহস তখন কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিল।।
দেশের আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতা বলে দিচ্ছে জাসদকেই আবার জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে সোচ্চার হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বিগত পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ব্যবসা করে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের যে ক্ষতি করে গিয়েছে তার থেকে মুক্তিযুদ্ধকে আজকে দেশের মানুষের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে। দীর্ঘ পনেরো বছর জনগণের ভোটের অধিকার হরন করে দূর্নীতি লুটপাট দখলবাজি দেশের অর্থ পাচার করে যে চরম বর্বরতা ও দুঃশাসন অপশাসন চালিয়েছে তার দায়ভার এখন মুক্তিযুদ্ধের ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সাহসিকতার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতাত্তোরকালে নিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল কি এটা মেনে নিবে?? নাকি তাদের অনিবার্য জন্মের পথ ধরে আবারও মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে রক্ষা করতে একসাথে হয়ে লড়াইয়ে নামবে।।
-আহমেদ ফজলুর রহমান মুরাদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ছাত্রনেতা