রংপুরের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে
দেড় শতাধিক মামলা ২২ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায়
বিশেষ প্রতিনিধি: রংপুরের ৩টি নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে ৫ হাজারেও বেশি মামলার বিচার হচ্ছে না। দিনের পর দিন বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন বিচার প্রত্যাশি নির্যাতিত নারীরা। এর মধ্যে অন্তত দেড় হাজার মামলা হচ্ছে ধর্ষণের মামলা। দেড় শতাধিকেরও বেশি ২০০৩ সালের ধর্ষণ মামলা ২২ বছরেও এখনও বিচার শেষ হয়নি। আইন বিশেষজ্ঞ আর মানবাধিকার কর্মীরা দায়ি করছেন আইনের সঠিক প্রয়োগ আর পুলিশের দায়িত্বহীনতা।
সরেজমিন রংপুরের ৩ নারী নির্যাতন আদালতে ঘুরে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে রংপুরের পীরগজ্ঞের বড় ফলিয়া গ্রামের লাল মিয়ার অন্ধ মেয়েকে ধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। ৫ বছরেও বিচার শুরু হয়নি। তিনি বলেন সহায় সম্বল যা ছিল বিক্রি করে প্রতি তারিখে আদালতে আসেন উকিল, মহুরী পেশকারকে টাকা দেন আর বাড়ি ফিরে যান। একই অভিযোগ মিঠাপুকুর উপজেলার হতদরিদ্র আসমা বেগমের তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করা হয়েছে ৪ বছরেও বিচার শুরু হয়নি। তাদের এত আরও অনেক নারী ও শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলেও বিচার পাচ্ছেননা বলে অভিযোগ বিচার প্রার্থীদের।
অন্যদিকে রংপুরের ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত থাকলেও ৩ নম্বর আদালতের বিচারক বদলী জনিত কারণে চলে অনত্র চলে যাওয়ায় ওই আদালতে দেড় হাজারেও বেশি মামলার বিচার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস ধরে।
এ ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী পলাশ কান্তি নাগ অ্যাডভোকেট জানান, নারী নির্যাতন মামলায় দিনের পর দিন বছরের পর বছর আদালতে আসছেন সহায় সম্বল বিক্রি করে বিচার হচ্ছেনা তাদের মামলা গুলোর। তিনি বলেন বিচার প্রার্থীরা অভিযোগ করেন কবে তারা ন্যায় বিচার পাবেন। আদালতে প্রতি মাসে আসেন আর হাজিরা দেন আর বাড়িতে চলে যাচ্ছেন বিচার পাচ্ছেন না।
রংপুরের বদরগজ্ঞ উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আফসানা বেগম জানালেন, যৌতুক না দেয়ায় তার স্বামী তাকে অকথ্য নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। ৫ বছর আগে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের বারান্দায় প্রতি মাসে আসছি বিচার হচ্ছে না। কবে বিচার পাব জানি না। তবে আমার বাবা মা অত্যান্ত গরিব মামলার খরচ চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে তিনি দ্রুত বিচারে দাবি করেন। একই অভিযোগ পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী গ্রামের রহিমা বেগমের। তিনি জানান তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। প্রতিবাদ করায় ১ বছরের কন্যা সন্তানসহ বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। ৬ বছর আগে মামলা করেছি এখনও বিচার শেষ হয় নাই। এরকম শত শত নির্যাতিতা নারী প্রতিদিন আদালতে আসছেন আর ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২ এর বিশেষ পিপি মোকসেদুল হক অ্যাডভোকেট জানালেন আমি কয়েক মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তার আদালতে ২০০৩ সালের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি দাবি করেন বিচারক আদালত ২ এর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। তিনিও মামলার সাক্ষী আসলে যে ভাবে হোক সাক্ষ্যগ্রহণ করার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ১ এর বিশেষ পিপি সফি কামাল অ্যাডভোকেট জানালেন ৩টি নারী নির্যাতন আদালতে প্রায় ৫ হাজারের এত মামলা রয়েছে। আমরা দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি বলে দাবি করেন তিনি।
তবে রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী রইছ উদ্দিন বাদশা অ্যাডভোকেট বলছেন ৩ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে পুলিশের মামলা তদন্তের নামে বছরের পর বছর কালক্ষেপন, দফায় দফায় আদালতে আবেদন করে সময় নেয়া আর সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পুলিশের অনীহা, এসব কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাদী ও আসামি দুই পক্ষ।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন রংপুরের আদালতে নারী নির্যাতন মামলার বিচার দ্রুত নিস্পত্তি করার জন্য আলাদা সেল গঠন করা সেই সঙ্গে উচ্চ আদালতের কঠোর মনিটারিং দাবি করেছেন তারা।