জাসদের রাজনীতি আজও প্রাসঙ্গিক – বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ফজলুর রহমান মুরাদ
সিরাজুল আলম খানের নিউক্লিয়াস এর ভুমিকা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়নি, বরং আরেকটি স্তরে উন্নীত হয়েছে মাত্র। ৭১’ এর বিজয়ের পর জনগনের ক্ষমতায়ন কায়েম হয়নি.।যারা ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ এবং আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক মুক্তির ফারাক জানে তারা লড়াইয়ের ময়দান ত্যাগ করেনি বরং এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এরা আদতে ‘নিউক্লিয়াস’ এর বীজই বহন করছে।আগামীর বাংলাদেশের জন্যে তারা কাজ করে যাচ্ছে, করে যাবে। সিরাজুল আলম খান তাদেরর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। হয়তো তিনি তাদের অঘোষিত নেতাও বটে।
উপরের কথাগুলি বলেছেন কবি ফরহাদ মাজহার।তাছাড়া গত ৬ই এপ্রিল গবেষক আলতাফ পারভেজ ও ৭ই এপ্রিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জালাল আহমেদ এর লেখা প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন প্রমান করছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনীতি আজও বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক। বর্তমান সরকারের গঠিত রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনের সুপারিশ করা প্রস্তাবসমুহ বিবেচনায় নিলে আরো স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে জাসদের রাজনীতি কতোটা সঠিক ছিলো।জাসদের রাজনৈতিক কর্মসূচি ১৮ দফা যা জাসদ গ্রহণ করেছিল ১৯৮০ সালে তারই পরিমার্জিত রুপ জাসদের স্রষ্টা প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ১৪ দফা রাষ্ট্রকে দর্শনের আলোকেই প্রণয়ন করা হয়েছে বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব।আর দেশের জনগনের কাছে সে প্রস্তাব এখন জাতির মুক্তি সনদ।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জন্য সৃষ্টি হয়েছে এক অপার সম্ভাবনা যা জাসদের নেতাকর্মীরা এখনও বুঝে উঠতে পারেন নি।জাসদ যদি আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের অতীতের ভুলত্রুটি শুধরে তাদের দলীয় রাজনীতিটাই সঠিকভাবে জনগনের সামনে তুলে ধরতে পারে তাহলে জাসদের পক্ষে একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেতে পারে।সেক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই সবভেদাভেদ ভুলে ১৯৭২ সালের রাজনৈতিক ধারায় ফিরে যেতে হবে।গড়ে তুলতে হবে জাসদীয় ধারার ঐক্য।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল যদি তাদের দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি ১৮ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে সকল অংশ ঐক্যবদ্ধ (১৯৭২ এর জাসদ) হয়ে আগামী ৬ মাসে জনগণের সামনে পৌঁছাতে পারে তাহলে আগামী নির্বাচনেই জাসদ বাকি সকল রাজনৈতিক দলসমূহের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। দেশের রাজনীতির মাঠে বর্তমানে সক্রিয় আওয়ামী লীগ,বিএনপি বা জামাত বড় দল হলেও তাদের কেউ সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন কর্তৃক সুপারিশ করা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব সমুহ বাস্তবায়নের জন্য রাজি নয়।আর দেশের জনগণের আস্থা বর্তমান সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি প্রতি শতভাগ। জনগণ বর্তমান সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে তাদের মুক্তি সনদ বিবেচনা করতে শুরু করেছেন। একারণে জনগণ বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের ক্ষমতা আরও ৫ বছর টিকিয়ে রাখতে সোচ্চার হয়েছে। সরকারের গঠিত সংস্কার কর্মসূচি যেহেতু জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি ফলে এই কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই জনগণের আস্থা অর্জন করা সহজ হবে।
আওয়ামী লীগ,বিএনপি ও জামাতের পরেই জাসদের নেতাকর্মীদের রয়েছে সারাদেশে নেটওয়ার্ক। জাসদ সারাদেশে একটা পরিচিত রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের একজন কর্মী নেই। জাসদের নেতাকর্মীদের ভোট ব্যাংকই মুলত বিএনপির ভোট ব্যাংক।জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল শতভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের দল।দেশের অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির সমর্থন জাসদের প্রতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নেই কোন চাঁদাবাজি দখল বাজি বা লুটপাটের অভিযোগ। এ পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে জাসদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ কেউ আনতে পারে নি।বিগত ১/১১ এর সময় সকল রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি লুটপাট দখল অর্থ পাচার করা সহ নানা অভিযোগ এসেছিল।তখন তাদের দলের অনেক নেতাই কারাগারে ছিলেন কিন্তু জাসদের কোন অংশের কোন নেতার নামে কোন দূর্নীতির অভিযোগ কেউ আনতে পারে নি। আজকে ঐক্য জাসদের নেতাকর্মীদের একটা বিরাট সুযোগ এসেছে। তাদের দায়িত্ব নেতাদের বিষয়টি অনুধাবন করানো।।আজকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে দেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক শক্তির রাজনৈতিক দলসমূহের পক্ষ থেকেও আগামী নির্বাচনকে জোটগতভাবে করতে একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।।