1. dailyshammerbarta@gmail.com : দৈনিক সাম্যের বার্তা : দৈনিক সাম্যের বার্তা
  2. info@www.dailyshammerbarta.online : দৈনিক সাম্যের বার্তা :
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ঝিনাইদহে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বাড়ি ঘর ভাংচুর, আহত ৭ পুদিনা আর চেরি টম্যাটো ফলবে একই টবে, একসঙ্গে! শ্যামনগরে দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। ঝিনাইদহে  অকারিগরি ক্রাফটদের আদলতের রায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ রংপুরে গৃহবধুকে ধর্ষনের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ তিস্তা পাড়ে এক হাজার শয্যার আন্তর্জাতিক হাসপাতালের দাবিতে গঙ্গাচড়ায় মানববন্ধন মিঠাপুকুরে ৫ মাসেও নববধূ আফরিনের রহস্যময় মৃত্যুর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসেনি মেঘ বলল ______শুভ দাশগুপ্ত বিক্ষোভে মুখর রংপুর ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে রংপুরে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মিছিল

যেভাবে জন্ম নিলো বাংলাদেশ- বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান মুরাদ।

  • প্রকাশিত: সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

কিভাবে জন্ম নিলো বাংলাদেশ-

১৫ থেকে ২৫ শে মার্চের দশদিন

-বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান মুরাদ।


ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় পৌঁছান। এরপরই প্রেসিডেন্ট ভবনে গভর্নর ও সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে। মুজিব-ইয়াহিয়া প্রথম বৈঠক হয় ১৬ মার্চ সকালে, দ্বিতীয় বৈঠক ১৭ মার্চ কোনো সহযোগী ছাড়াই। দুজনের সরাসরি এ বৈঠকের কোনো কার্যবিবরণী রাখা হয়নি।

জেনারেল গুল হাসান জানান, প্রেসিডেন্টের নির্দেশ অনুযায়ী পীরজাদা ব্রিফ করেন। মুজিব ইয়াহিয়া খানকে পরিষ্কার করে দেন, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিমের সঙ্গে আগের ভিত্তিতে একসঙ্গে থাকবে। তিনি অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাতে থাকেন। ইয়াহিয়াও ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গভর্নরকে সহায়তা করার জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে একমত হন। সামরিক বিধান বলেই সামরিক কার্যক্রম স্থগিত ও মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।

১৭ মার্চ প্রেসিডেন্টের সহযোগীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের বৈঠক হয় ক্ষমতা হস্তান্তরের বিধিমালা নিয়ে। আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ছিলেন কামাল হোসেন, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম। প্রেসিডেন্টের সহযোগীরা জানান, জাতীয় পরিষদের বিধান ছাড়া সামরিক আইন প্রত্যাহার করলে আইনগত শূন্যতা দেখা দেবে। আওয়ামী লীগের নেতারা সামরিক আইন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকেন এবং প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। কোনো সমঝোতা ছাড়াই বৈঠক মুলতবি হয়ে যায়।

১৯ মার্চ মুজিব ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করে পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। বিকেলে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা বসেন এবং প্রেসিডেন্টের সহযোগীরা বলেন, ইয়াহিয়া খানের ১৯৬৯ সালের ফরমান বলেই দেশ শাসিত হচ্ছে। সামরিক ফরমান না থাকলে তাঁর (ইয়াহিয়া) ক্ষমতায় থাকার বৈধতাও থাকে না। আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এটি রাজনৈতিক বিষয়, রাজনৈতিকভাবেই সমাধান খুঁজতে হবে। কামাল হোসেন বলেন, ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ বিলুপ্ত করলে, প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করলে সমস্যা নেই।

১৯ মার্চের বৈঠকের পর পীরজাদা কর্নওয়ালিশ ও গুল হাসান যৌথভাবে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করেন ১৯৬২ সালের সংবিধান সংশোধন করে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের কাছে ক্ষমতা ন্যস্ত করা যায়। সামরিক আদালত ও প্রশাসক পদ যেভাবে রহিত করা হয়েছে, সেভাবে সামরিক বিধানাবলি রহিত করা যায়। কিন্তু প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক পদ বহাল থাকবে। সামরিক কর্তৃপক্ষের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খান এই প্রস্তাবে সম্মতি দেন এবং কর্নওয়ালিশ এর আইনি সমস্যা সমাধান করতে বলেন।

২০ মার্চ প্রেসিডেন্টের পুরো টিম ও আওয়ামী লীগ নেতারা আরেক দফা বৈঠকে বসেন। ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার আগে সামরিক আইন প্রত্যাহারের সমস্যা কী, কর্নওয়ালিশকে ব্যাখ্যা করতে বলেন।

কর্নওয়ালিশ যখন বিষয়টি ব্যাখ্যা করছিলেন, তাজউদ্দীন আহমদ তাঁকে বাধা দিয়ে বলেন, এসব কী বলছেন, সামরিক আইন পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিষয়ে আমাদের নেতা ও প্রেসিডেন্ট একমত হয়েছেন। কর্নওয়ালিশ বলেন, কয়েক দিন পর ২৫ মার্চ জাতীয় অধিবেশন বসতে যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত থাকতে পারে। মুজিব একমত হলেন না এবং বললেন, ‘না না না। আপনি বুঝতে পারছেন না এটি রাজনৈতিক বিষয়।’ আওয়ামী লীগ অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে চাপ দিতে থাকে এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ কে ব্রোহি তাদের অবস্থানকে সমর্থন করেন। প্রেসিডেন্ট বললেন, মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

এ বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় যে মুজিবের প্রস্তাব অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি পৃথক কমিটি হবে এবং তাঁরা ঢাকা ও ইসলামাবাদে বসে সাংবিধানিক প্রস্তাব পেশ করবেন। পরে উভয় কমিটির প্রস্তাব জাতীয় পরিষদে উপস্থাপন করা হবে, তাঁরা দুই পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনা করবেন। পরবর্তী দুদিন কর্নওয়ালিশ ও গুল হাসান আওয়ামী লীগের মতামতকে ধারণ করে এ রকম কয়েকটি ঘোষণার খসড়া তৈরি করেন। এম এম আহমদকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তলব করা হয় অর্থনৈতিক বিষয়ে পরামর্শ নিতে।

কিন্তু ২৪ মার্চ মুজিব ও তাজউদ্দীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠক করেন, তাঁরা আর কেন্দ্রীয় সরকারে কোনো প্রতিনিধিত্ব দিতে চান না, যাতে প্রেসিডেন্ট নেতৃত্ব দেবেন। অর্থাৎ এক ছাদের নিচে নয়। তখন মুজিবের একমাত্র দাবি প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আইনি বৈধতা দেওয়া হবে। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। গোটা প্রদেশের ওপর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত। উগ্রপন্থীরা প্রকাশ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের কথা বলছেন।

২৪ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সহযোগীদের তৃতীয় ও শেষ বৈঠক হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা সেখানে ছয় দফার বাইরে এসে একটি সংশোধনী আনেন। আগের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান হবে একটি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাঁরা সংশোধনীতে বললেন, বাংলাদেশ স্টেটের সংবিধান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের স্টেটগুলোর সংবিধান রচনার পর প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকবেন এবং সেই অধিবেশনে সব সদস্য সার্বভৌম সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তান কনফেডারেশনের একটি সংবিধান প্রণয়ন করবেন। প্রেসিডেন্টের সহযোগীরা দেখতে পান, আওয়ামী লীগের এ প্রস্তাব মেনে নিলে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনগত ভিত্তি থাকে না। তাঁরা প্রতিবাদ করলেন। কর্নওয়ালিশ বললেন, এ সংশোধনী আগের খসড়ার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তিনি কনফেডারেশন শব্দের পরিবর্তে পাকিস্তান ইউনিয়ন ব্যবহারের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা সেই প্রস্তাব এই বলে নাকচ করে দিলেন যে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে মুজিবের নির্দেশেই।

২৫ মার্চ ১৯৭১ সাল সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বত্রিশ নম্বরে এসে শেখ মুজিবকে সম্ভাব্য আক্রমনের কথা জানাচ্ছিলেন। একে একে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এইচ এম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামাল হোসেন, পাকিস্তানী সাংবাদিক তারিক আলী, ক্যাপ্টেন রহমান, আঃ রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান, আ স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ দেখা করেন। তারা শত অনুরোধ করেও মুজিবকে স্বেচ্ছায় কারাবরণ রোধ করতে পারলেন না, বরং তিনি বাসভবন থেকে গ্রেফতার বরণের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

রাত দশটার পরে ডক্টর কামাল হোসেন দেখা করলে মুজিব জানতে চান, ইয়াহিয়ার প্রতিনিধি জেনারেল পীরজাদার কাঙ্খিত ফোনটি এসেছিলো কি না। কামালের নেতিবাচক জবাবে মুজিব হতাশ হয়ে পড়েন। এ সম্পর্কে ডঃ কামাল হোসেন লিখেছেন, “এমনকি ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আমি যখন শেখ মুজিবের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম, তখনও শেখ মুজিব আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি ঐ টেলিফোন পেয়েছি কিনা। আমি তাঁকে জানালাম যে, আমি তা পাইনি। এ রাতেই পাকিস্তানী সৈন্যরা বাঙ্গালী জনগণের ওপর আক্রমন চালাল এবং গণহত্যা ও রক্তস্নান শুরু হল, যা এড়ানোই ছিল আলাপ-আলোচনা চালানো ও দর কষাকষির মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছানোর এখানে প্রধান লক্ষ্য” (সূত্রঃ ‘মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল’, ডঃ কামাল হোসেন, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা পৃষ্ঠা ৭৬-৭৭)।

কি ছিলো সে সমঝোতায়?
ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে মার্চের ১৭ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত দফায় দফায় মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক চলে। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব জানান, ফলপ্রসু না হলে তিনি আলোচনা করতেন না। এ সমঝোতা প্রসঙ্গে জানা যায়, “দুই পক্ষ অন্তবর্তী সরকার নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখলেন। বৈঠক শেষে শেখ মুজিব একজন সিনিয়র সামরিক অফিসারকে জানালেন যে, তিনি এবং ইয়াহিয়া এগারজন মন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীসহ ছয় জন আসবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে, এবং বাকী পাঁচজন আসবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে” (সুত্রঃ Richard Sisson and Leo E. Rose,1990. ‘War and Secession Pakistan, India, and the Creation of Bangladesh’, University of California Press)। অতঃপর ২৪ মার্চ ইয়াহিয়া ও আওয়ামীলীগের প্রতিনিধিদের খুটিনাটি আলোচনা শেষে চারটি বিষয়ে ঐক্যমত হয়ঃ
১) ১৯৪৭ সালের ভারতীয় স্বাধীনতা আইনের অনুসরনে প্রেসিডেন্টের আদেশের বলে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
২) কেন্দ্রে ইয়াহিয়া প্রেসিডেন্ট থাকবেন।
৩) প্রদেশসমুহের ক্ষমতা সংখ্যাগরিষ্ট দলের হাতে হস্তান্তরিত করা হবে।
৪) জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা প্রথমে আলাদাভাবে বৈঠকে বসবেন, পরে পরিষদের যুক্ত অধিবেশনে সংবিধান চুড়ান্ত করা হবে (সূত্র: সাইদুর রহমান, ২০০৪। ‘১৯৭২-৭৫ কয়েকটি দলিল’ পৃষ্ঠা ৬৪)।

২৪ মার্চের ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠকে আওয়ামীলীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ডঃ কামাল হেসেন এবং ইয়াহিয়ার পক্ষে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, এম এম আহমদ, লেঃ জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন। আলোচনাকালে আওয়ামীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের নাম “ফেডারেশন অব পাকিস্তান” প্রস্তাব করলে ইয়াহিয়ার প্রতিনিধি বিচারপতি কর্নেলিয়াস “ইউনিয়ন অব পাকিস্তান” পাল্টা প্রস্তাব দেন। পরে ঠিক হয়, চুক্তি সাক্ষরকালে নাম চুড়ান্ত হবে। আলোচনা শেষে স্থির হ‍য়, ইয়াহিয়ার প্রতিনিধি জেনারেল পীরজাদা পরের দিন, অর্থাৎ ২৫ তারিখে কামাল হোসেনকে টেলিফোন করে দলিলে সাক্ষরের জন্য ডেকে নেবেন। কিন্তু মুজিবকে কিছু না জানিয়ে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন।এর থেকেই বোঝা যায় ইয়াহিয়ার এই আলোচনা সবটাই ছিল নাটক এবং সময়ক্ষেপণ।

চব্বিশ তারিখে চূড়ান্ত বিবৃতি কী হবে সেটা আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনকে টেলিফোন করে জানানোর কথা ছিলো পাকিস্তানী পক্ষের।কিন্তু সেই টেলিফোন আরে আসেনি। উল্টো ২৫শে মার্চ রাত থেকে হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইয়াহিয়া, ভূট্টোসহ অন্যান্যরা এর আগেই ঢাকা ত্যাগ করেন। ফলে আলোচনা ব্যর্থ হলো। পাকিস্তানীরা রাজনৈতিক সমস্যার পরিবর্তে সামরিক সমাধানের পথে হাটলো। কিন্তু এটি কি আদৌ আলোচনা ছিলো? আর এর মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ইচ্ছাই বা কতটা ছিলো পাকিস্তানী সামরিক জান্তার? নাকি, আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানীরা মূলত: রণসাজে সজ্জিত হয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তরেরও কোন ইচ্ছা পাকিস্তানীদের ছিলো না।, “৭০ এর সাধারণ নির্বাচনের পরই পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বাঙ্গালির উপর হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া মানেই শেখ মুজিবকে ক্ষমতা দেয়া হবে না।”

মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক নিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শেখ মুজিব এই সময়ক্ষেপণের আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। এখানে শেখ মুজিবেরও কৌশল ছিলো। “তিনি আলোচনা অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনা ভেস্তে যাওয়া, যেটা ইয়াহিয়া খানের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল, সেটাতে শেখ মুজিবের কোন দায় আসেনি।”, “ফলে যখন মিলিটারির হামলা শুরু হলো, তখন খুব সহজেই বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন তিনি পেয়েছেন। যেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।” “শেখ মুজিবের লক্ষ্য ছিলো বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দেয়া যে, তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী নন। তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ্য দলের নেতা। এবং তিনি আলোচনার মাধ্যেই সমস্যার সমাধান চান।””কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, পাকিস্তানি শাসকরা তার একটি শর্তও মানবে না। সেজন্য আগে থেকেই ৭ই মার্চের ভাষণেই তিনি বাঙ্গালিকে সশস্ত্র সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।”

“২১শে মার্চ নামে মাত্র এক পাকিস্তান রেখে দুই অংশের জন্য দুই প্রধানমন্ত্রী এই ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আলোচনা শেষ হয়। ২২শে মার্চে এ সংবাদ প্রচারিত হয়। সংবাদপত্র প্রকাশ করে আলোচনা সফল হয়েছে। ২৩শে মার্চে পাকিস্তান দিবসে পাকিস্তানি পতাকায় আগুন সারাদেশব্যপী উত্তোলিত বাংলাদেশের পতাকা।২৩শে মার্চের রাত ৪টা। আমি বললাম “দুইমু্দ্রা” চুক্তিতে থাকতে হবে। মুজিব ভাই বললেন আমিও তাই ভাবছি। এভাবেই শেষ হলো অখণ্ড পাকিস্তান, জন্ম নিলো বাংলাদেশ। – ” সিরাজুল আলম খান”।

 

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট