1. dailyshammerbarta@gmail.com : দৈনিক সাম্যের বার্তা : দৈনিক সাম্যের বার্তা
  2. info@www.dailyshammerbarta.online : দৈনিক সাম্যের বার্তা :
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ঝিনাইদহে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বাড়ি ঘর ভাংচুর, আহত ৭ পুদিনা আর চেরি টম্যাটো ফলবে একই টবে, একসঙ্গে! শ্যামনগরে দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। ঝিনাইদহে  অকারিগরি ক্রাফটদের আদলতের রায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ রংপুরে গৃহবধুকে ধর্ষনের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ তিস্তা পাড়ে এক হাজার শয্যার আন্তর্জাতিক হাসপাতালের দাবিতে গঙ্গাচড়ায় মানববন্ধন মিঠাপুকুরে ৫ মাসেও নববধূ আফরিনের রহস্যময় মৃত্যুর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসেনি মেঘ বলল ______শুভ দাশগুপ্ত বিক্ষোভে মুখর রংপুর ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে রংপুরে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মিছিল

আজ ঐতিহাসিক ২৩শে মার্চ, প্রতিরোধ দিবস

  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

আজ ঐতিহাসিক ২৩শে মার্চ, প্রতিরোধ দিবস

 

 

আজ ঐতিহাসিক ২৩শে মার্চ, প্রতিরোধ দিবস। বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এদিন দেশের সর্বত্র সবুজ জমিনে লাল বৃত্তের মাঝে সোনালি মানচিত্র আঁকা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধের সূচনাপর্বে পতাকা উত্তোলনের এ ঘটনা বাঙালীর মুক্তি আন্দোলনে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিলো। যার প্রথম সূচনা হয়েছিল ২রা মার্চ ১৯৭১।

১৯৭১ সালের এইদিন পশ্চিম পাকিস্তান ও ঢাকার প্রেসিডেন্ট হাউস ‘পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবস’ পালন করলেও গোটা পূর্ব পাকিস্তানে তা পালিত হয় ‘ঐতিহাসিক লাহোর দিবস’ হিসেবে। পাকিস্তান দিবসকে ন্যাপ (ভাসানী) ‘স্বাধীন পূর্ববঙ্গ দিবস’ এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে।

এইদিনটি তথাকথিত ‘পাকিস্তান দিবস’ হলেও ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর ছাড়া সেদিন গোটা পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। ঢাকা সেদিন পরিণত হয়েছিলো পতাকার নগরীতে। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের খবরে জানা যায়, কড়া পাহারায় প্রেসিডেন্ট ভবন, গভর্নর হাউস, সেনানিবাস ও বিমানবন্দর ছাড়া কোথাও পাকিস্তানের পতাকা দেখা যায়নি।

মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নির্দেশে ন্যাপ (ভাসানী) সেই দিনটি ‘স্বাধীন পূর্ববঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন করে। আর এর মধ্যে দিয়ে যেনো মুছে দেওয়া হয় ‘পাকিস্তান দিবস’ এর কথা। ঢাকার সচিবালয়, হাইকোর্ট, গণপরিষদ, ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা বেতার, টেলিভিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রধান বিচারপতি ও মুখ্য সচিবের বাসভবনসহ সব সরকারী-বেসরকারী ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।

স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বাধীন বাংলার পতাকা বিতরণ করা হয়। দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত নকশা দেখে পতাকা বানিয়েও নিজ নিজ বাসগৃহে উত্তোলন করে অনেকে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন কালো পতাকাও ওড়ানো হয়।

স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের দাবীতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডির বাসভবনে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। এ সময় বাঙালির সম্মিলিত কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি অভূত কাঁপন তোলে চারদিকে। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সামরিক কায়দায় জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার পর প্রভাতফেরি বের করে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সত্যিকারের স্বাধীনতার আস্বাদ পাচ্ছিলো বাংলার দুর্জয় ও অকুতোভয় ছাত্র জনতা। পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্র-ছাত্রী ও সাবেক বাঙালী সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সেচ্ছাসেবক বাহিনী’র আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ ও মহড়া। মোস্তফা মহসীন মন্টু, খসরু, হাসানুল হক ইনু, মহানগর ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিতভাবে আস্তে আস্তে পতাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করে। এসময় এ বাহিনীর সদস্যরা সামরিক কায়দায় জাতীয় পতাকার প্রতি অভিবাদন জানায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাজানো হয়, যা পরে জাতীয় সঙ্গীত হয়। সেচ্ছাসেবক বাহিনীর গার্ড অব অনার নেয় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন।
একইভাবে সারাদেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ মোতাবেক পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।।

এদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করতে গেলে পাকিস্তানী সেনারা বাঙালী ছাত্র-জনতাকে বাধা দেয়। তবে ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিবাদের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সব বাধা উপেক্ষা করেই সেখানে স্বাধীন বাংলার উত্তোলন করে।

ঢাকার চীন, ইরান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে প্রথমে পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলন করা হলেও পরে তা নামিয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। পাকিস্তানী পতাকার পরিবর্তে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হয় ব্রিটিশ হাইকমিশন ও সোভিয়েত কনস্যুলেটেও। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত কেবলই স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে দেখা গেছে সেদিন। রাজপথ, ভবন, গাছের চূড়া ও লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় পতাকা উড়িয়ে মিছিলে মিছিলে গর্জে উঠেছিলো বীর বাঙালী।

“ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেক ব্রিগেড সাজানো হয়েছিল। একটির পর একটি ব্রিগেড অভিবাদন জানিয়ে মঞ্চ অতিক্রম করে পাশে অবস্থান নিচ্ছে, আরেকটি ব্রিগেড মঞ্চের দিকে মাথা বাঁকিয়ে অভিবাদন দিয়ে প্যারেড করে এগিয়ে যাচ্ছে।

পরদিন এই প্রতিরোধ দিবসের খবরে ব্যানার শিরোনাম করে দৈনিক ইত্তেফাক। রবীন্দ্রনাথের গান থেকে উদ্ধৃত করে ওই শিরোনাম ছিলো, “আমরা শুনেছি ঐ, মাভৈ: মাভৈ: মাভৈ:”।

ঢাকা টেলিভিশনের বাঙালী কর্মীরা এদিন অভূতপূর্ব এক কাজ করে। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান এদিন মধ্যরাত পেরিয়ে আরও ৯ মিনিট চলে। এদিন টেলিভিশনে পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত বাজেনি। পর্দায় পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। এদিন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান যেনো শেষই হয়না। অন্যান্য দিন রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে সব সুনসান। কিন্তু সেদিন মহোৎসব চলছে তো চলছেই। সুকান্তর কবিতার উপর চমত্কার দুটো অনুষ্ঠান হয়। একটা ‘ছাড়পত্র’ – মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনা। ডঃ নওয়াজেশ আহমেদের ফটোগ্রাফির সঙ্গে কবিতার আবৃত্তি। আরেকটা ‘দেশলাই’- বেলাল বেগের প্রযোজনা। সুকান্তর দেশলাই কবিতার আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে টিভি পর্দায় দেখা যায় অসংখ্য দেশলাইয়ের কাঠি একটার পর একটা জ্বলে উঠছে। একটা কাঠি থেকে আরেকটাতে আগুন ধরতে ধরতে সবগুলো মশালের মতো জ্বলতে লাগলো পুরো টিভি পর্দা জুড়ে। এরপর শুরু হল আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাটক ‘আবার আসিব ফিরে’। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ একটি ছেলের বিস্মৃতপ্রায় স্মৃতি আবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে একাত্তরের গণআন্দোলনে। নাটকটি ২৩শে মার্চের রাত পৌনে ১১টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ২৪শে মার্চের প্রথম প্রহরে। টেলিভিশনে ঘোষক সরকার ফিরোজ উদ্দিন সমাপনী ঘোষণায় বলে- ‘এখন বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা বেজে ৯ মিনিট – আজ ২৪শে মার্চ, বুধবার। আমাদের অধিবেশনের এখানেই সমাপ্তি’। অর্থাৎ ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবসে বীর বাঙালীরা টেলিভিশন পর্দায় পাকিস্তানী পতাকা দেখাতে দেয়নি।

এদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে কোন বৈঠক হয়নি। তবে দু’জনের উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে দুই দফা বৈঠক হয়। প্রথম বৈঠক দুপুর ১২টা থেকে একঘণ্টা এবং দ্বিতীয় বৈঠক সন্ধ্যা ৬টা থেকে দু’ঘণ্টা চলে। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ছিলো সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামাল হোসেন আর জেনারেল ইয়াহিয়ার পক্ষে ছিলো বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা, এম এম আহমদ ও কর্নেল হাসান। দু’দফা বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ের বিস্তারিত জানতে চাইলে তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদেরকে কিছু বলতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘পাকিস্তান দিবস’ ২৩শে মার্চ এর বাণীতে মিথ্যাচার অব্যাহত রাখে। তার বাণীতে লেখা ছিলো- “নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি তাহলে কোনো কিছুই আমরা হারাব না”।

এদিন বাংলাদেশে চলাচলে পাকিস্তানের বিমান ও জাহাজকে মালদ্বীপের ব্রিটিশ ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার খবর প্রকাশ করে ইত্তেফাক।

সেদিন শহিদ মিনারে পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা কয়েকটা দুর্দান্ত পোস্টার লাগানো হয়েছিলো। মিনারের সিঁড়ির ধাপের নিচে সার সার সেঁটে দেয়া প্রত্যেকটা পোস্টারে একটা মানুষের মুখ, নিচে লেখা এদেরকে খতম করো। মুখটা একদম প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মুখের মতো।

বিকালে পশ্চিম পাকিস্তানী জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে কাউন্সিল মুসলিম লীগের প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ের প্রধান, পাঞ্জাব কাউন্সিল লীগের প্রধান ও বেলুচিস্তান ন্যাপের সভাপতি উপস্থিত ছিলো। বৈঠক শেষে পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলে, আমরা চাই দেশের মঙ্গলের জন্য সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয়ে যাক। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বলে, আপনারা ভালো কামনা করুন, কিন্তু খারাপের জন্যও প্রস্তুত থাকুন।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট